আমার লেখালেখি ও হিসাব

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি - NCTB BOOK

 

Content added || updated By
মাইক্রোসফট ওয়ার্ড
মাইক্রোসফট এক্সেল
পাওয়ারপয়েন্ট
ফক্সপ্রো

ওয়ার্ড প্রসেসরে আমার লেখার কাজ

মানুষের মনের ভাব প্রকাশ করার একটা মাধ্যম হলো লেখালেখি করা। আমাদের প্রয়োজনে আমাদেরকে নানারকমের লেখালেখি করতে হয়। হতে পারে সেটা কবিতা, গল্প, উপন্যাস বা দিনপঞ্জি লেখা। লেখালেখি ছাড়াও আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন রকমের ছোট-বড় হিসাব করতে হয়। বাজারের হিসাব, বাসাভাড়ার হিসাব, পরীক্ষার ফলাফল প্রস্তুত ইত্যাদি। আমাদের লেখালেখি ও হিসাবের এ কাজগুলো করা এক সময় কষ্টসাধ্য ছিল। কিন্তু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিকাশের ফলে এ কাজগুলো করার জন্য এখন আমাদের হাতের নাগালে রয়েছে অনেক ধরনের সফটওয়্যার। এসব সফটওয়্যারকে বলা হয় অফিস সফটওয়্যার। আমাদের ডেস্কটপ, ল্যাপটপ বা স্মার্টফোনে এ সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করা যায়। লেখালেখির জন্য রয়েছে ওয়ার্ড প্রসেসর আর হিসাবের জন্য রয়েছে স্প্রেডশিট এনালাইসিস সফটওয়্যার। এগুলো সম্পর্কে তোমরা পূর্ববর্তী শ্রেণিগুলোতে প্রাথমিক ধারণা পেয়েছ। এ শ্রেণিতে তোমরা এগুলো সম্পর্কে কিছু অগ্রসর ধারণা পাবে ।
কোনোকিছু লেখার কাজ হলো কল্পনার জগৎকে বাস্তবে নিয়ে আসা। মানুষ তার কল্পনাকে অন্যের কাছে তুলে ধরতে মাধ্যম হিসেবে লেখার কাজ শুরু করে। এ ইতিহাস আমরা অনেকেই জানি। বর্তমানে এ কাজে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে । আর এক্ষেত্রে ওয়ার্ড প্রসেসিং-এর গুরুত্ব অনেক । টেলিভিশন, মোবাইল ফোন বা কম্পিউটার ইত্যাদি যন্ত্রে তথ্য গ্রহণ ও উপস্থাপনের জন্য বেশিরভাগ সময় লিখিত কোনোকিছুর প্রয়োজন হয়। আগে যেভাবেই করা হোক না কেন এখন এ কাজটি করা হচ্ছে ওয়ার্ড প্রসেসরের সাহায্যে। ওয়ার্ড প্রসেসরে কাজ করতে গিয়ে আমরা অনেক সুবিধা পেয়ে থাকি । যেমন,

•নির্ভুলভাবে লেখালেখির কাজ করা যায় এবং ভুল হলে সাথে সাথে সংশোধনের সুযোগ পাওয়া সম্পাদনার সুযোগ থাকায় লেখার কাজ নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করা যায় ,নানাভাবে লেখাকে উপস্থাপন করা যায়। যেমন- লেখার আকার ছোট-বড় করা, রঙিন করা, বক্স আকারে উপস্থাপন করা ইত্যাদি পুরো লেখা প্রথম থেকে শুরু না করে নতুন লেখা প্রবেশ করানো, লেখা মুছে ফেলা বা লেখাকে পুনর্বিন্যাসকরার সুযোগ পাওয়া যায়
• ছবি, গ্রাফ, টেবিল, চার্ট ইত্যাদি সংযোজন করে ডকুমেন্টকে আরো আকর্ষণীয় করা যায়
ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করে তা যেকোনো সময় ব্যবহার করা যায়। ফলে একই কাজ বারবার করার প্রয়োজন হয় না
প্রয়োজনবোধে দরকারি তথ্য এক ডকুমেন্ট হতে অন্য ডকুমেন্টে কপি করা যায়
• একই সাথে একাধিক ডকুমেন্ট নিয়ে কাজ করা যায় • ফাইন্ড-রিপ্লেস কমান্ড ব্যবহার করে বড় কোনো ডকুমেন্টে অল্প সময়ে শব্দ খোঁজা যায় এবং প্রতিস্থাপন করা যায়
• যখন কোনো ডকুমেন্ট বারবার ব্যবহারের প্রয়োজন হয় তখন সেটিকে টেমপ্লেট আকারে সংরক্ষণ করে রাখা যাতে সময় সাশ্রয় হয়। যেমন- প্রতি সপ্তাহে ল্যাব রিপোর্ট প্রস্তুত করার প্রয়োজন হলে সেটি টেমপ্লেট আকারে সংরক্ষণ করে রাখলে তা বারবার ব্যবহার করা যায়
২০১৮
• বড় আকারের ডকুমেন্টে যেমন গবেষণাপত্রে বিষয়বস্তুর সারণি, রেফারেন্স, ছবির তালিকা, গ্রন্থপঞ্জি ইত্যাদি অনেক কাজ খুবই স্বল্প সময়ে সম্পাদন করা যায়

• বানান দেখার সফটওয়্যার বা স্পেল চেকার-এর সাহায্যে সহজেই বানান সংশোধন করা; স্বয়ংক্রিয়ভাবে বানান সংশোধনের ব্যবস্থাও ওয়ার্ড প্রসেসরে রয়েছে
ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করে তা যেকোনো সময়, যতবার ইচ্ছা ততবার প্রিন্ট করার সুবিধা রয়েছে
ইলেকট্রনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে যেকোনো জায়গায় যেকোনো সময় ডকুমেন্ট প্রেরণ করা যায় কাগজের নথি বা ফাইলের পরিবর্তে ওয়ার্ড প্রসেসরে তৈরি ফাইল খুব সহজেই সংরক্ষণ করা যায় • ফাইলের ব্যবস্থাপনা সহজ যা আধুনিক অফিস ব্যবস্থাপনায় অপরিহার্য।
এছাড়াও ওয়ার্ড প্রসেসিং সফট্ওয়্যারগুলোতে আরও নানা সুবিধা রয়েছে। আমরা এগুলো ব্যবহার করার সময়
অনেক কিছু জানতে পারব। এতসব সুবিধার কারণে প্রতিদিন এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। তোমরা পূর্ববর্তী শ্রেণিতে ওয়ার্ড প্রসেসরে নতুন ডকুমেন্ট সৃষ্টি এবং পুরানো ডকুমেন্ট খোলার কৌশল শিখেছ। আরো লিখেছ কীভাবে এ সকল ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করতে হয়। এবার আমরা ওয়ার্ড প্রসেসরের আরো কিছু কৌশল শিখব। কিন্তু এজন্য তোমাদের পূর্বে অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতা কাজে লাগাতে হবে।
আমরা জানি মাইক্রোসফট অফিস হলো পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত সফটওয়্যার। এছাড়াও বিভিন্ন ধরণের অফিস সফটওয়্যার রয়েছে। যার যেকোন একটি আমরা ব্যবহার করতে পারি। বর্তমানে অনেকেই এগুলোর সর্বশেষ সংস্করণ ব্যবহার করছে। তবে যেকোন একটি সংস্করণে অভিজ্ঞ হলে অন্যটি ব্যবহার করতে কোনো অসুবিধা হয় না। বাংলাদেশে যেহেতু মাইক্রোসফট অফিস সফটওয়্যারটি বেশি ব্যবহৃত হয় তাই এখানে আমরা মাইক্রোসফট অফিস ২০০৭ এর মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এবং মাইক্রোসফট এক্সেল এর ভিত্তিতে আলোচনা করব।

Content added By

ওয়ার্ড আর্ট যোগ করা

ইনসার্ট ট্যাব থেকে তোমরা ইচ্ছে করলে বিভিন্ন স্টাইলের লেখা যোগ করতে পার। এজন্য তোমাদের ইনসার্ট ট্যাবের টেক্সট গ্রুপে ওয়ার্ড আর্ট-এ ক্লিক করে তোমাদের পছন্দমতো স্টাইল নির্বাচন করতে হবে। তারপর যে ডায়ালগ বক্স আসবে তাতে ফন্ট ঠিক করে লেখা দিলে তা কাঙ্ক্ষিত স্টাইলে প্রদর্শন করবে।

  মার্জিন ঠিক করা

ডকুমেন্টের লেখার মার্জিন ঠিক করতে হলে রিবনের পেইজ লেআউট ট্যাবে ক্লিক করতে হবে। তারপরে মার্জিন আইকনে ক্লিক করে মার্জিন ঠিক করে দিতে হবে। মার্জিন আইকনে ক্লিক করলে মার্জিন নির্ধারণের বিভিন্ন অপশন দেখাবে। সেখান থেকে তোমাদের পছন্দমতো মার্কিন নির্ধারণ করে দিতে পার অথবা কাস্টম মার্জিনে ক্লিক করে তোমরা নিজস্ব মার্জিন ব্যবহার করতে পারো।
একটি ডকুমেন্ট প্রস্তুত করে মার্জিন নির্ধারণ কর।


প্যারাগ্রাফের লাইন ব্যবধান নির্ধারণ করা

ডকুমেন্টের প্রত্যেকটি লাইনের মধ্যে কী পরিমাণ ব্যবধান হবে তা নির্ধারণ করতে রিবনের পেইজ লেআউট ট্যাবে ক্লিক করতে হবে। এখানে প্যারাগ্রাফ গ্রুপে স্পেসিং-এ লাইনের আগে ও পরে কত পয়েন্ট জায়গা থাকবে তা নির্ধারণ করে দিতে হবে। Right: 0 4 After: ডকুমেন্ট টাইপ করার পরেও এ কাজটি করা যায়। সেক্ষেত্রে প্রথমে ডকুমেন্টের যে অংশের লাইন ব্যবধান ঠিক করতে হবে তা নির্বাচন করতে হবে। তারপর উপরের বর্ণনা অনুযায়ী লাইন ব্যবধান ঠিক করে দিতে হবে। 

 

পৃষ্ঠার নম্বর দেওয়া

ডকুমেন্ট প্রস্তুত করার একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো এর প্রতিটি পৃষ্ঠায় নম্বর দেওয়া। এ কাজটি করার জন্য রিবনের ইনসার্ট ট্যাবে হেডার ও ফুটার গ্রুপে পেইজ নাম্বার ক্লিক করে নির্দিষ্ট অপশন বেছে নিতে হবে। তোমরা তোমাদের পছন্দমতো পৃষ্ঠার উপরে বা নিচে পৃষ্ঠার নম্বর যোগ করতে পার।

 

বানান পরীক্ষণ ও সংশোধন

ওয়ার্ড প্রসেসিং সফটওয়্যারের একটি বড় সুবিধা হচ্ছে বানান পরীক্ষণ । ডকুমেন্টের কোথাও কোন বানান ভুল হলে তা পরীক্ষণ এবং সংশোধন করা যায় । ব্যাকরণও শুদ্ধ করা যায় অনেক ক্ষেত্রে। বানান পরীক্ষণের ক্ষেত্রে নতুন শব্দ প্রোগ্রামের অভিধানে সংযোজন করা যায় । বানান পরীক্ষণের সময় ভুল শব্দ বের করে সম্ভাব্য কিছু শুদ্ধ শব্দ উপস্থাপন করে, যাতে ব্যবহারকারী সঠিক শব্দটি বেছে নিতে পারে । এসময় অভিধানের ডিফল্ট ভাষা নির্ধারণ করে নিতে হয় । তা'না হলে আপাত শুদ্ধ বানান ভুল দেখাতে পারে । যেমন, যদি কোন ওয়ার্ড প্রসেসরের অভিধানে আমেরিকান ইংরেজি ভাষা নির্বাচন করা থাকে এবং ডকুমেন্ট Colour শব্দটি লেখা হয়, তবে তা ভুল বানান হিসাবে সনাক্ত হবে । কারণ, Colour বানানটি ব্রিটিশ ইংরেজির, আমেরিকান ইংরেজি অনুসারে এটি হবে Color

 এছাড়া বৈজ্ঞানিক নাম, ব্যক্তি বিশেষ, সংগঠন বা জায়গার নাম ইত্যাদিকে স্পেলচেকার ভুল হিসেবে চিহ্নিত করে । এসব শব্দ ভুল না শুদ্ধ তা ব্যবহারকারীকেই নিশ্চিত করতে হয় ।

Content added By
Content updated By

স্প্রেডশিট ও আমার হিসাব-নিকাশ

স্প্রেডশিট বিশ্লেষণ
তোমরা অষ্টম শ্রেণিতে স্প্রেডশিট বিশ্লেষণ সফটওয়্যারের সাথে পরিচিত হয়েছ। এর বৈশিষ্ট্যগুলোর কথা মনে আছে তো? চলো দেখি স্প্রেডশিট বিশ্লেষণের বৈশিষ্ট্যগুলো:
স্প্রেডশিট বিশ্লেষণের বৈশিষ্ট্যসমূহ-
* বিভিন্ন রকমের সংখ্যা বা অক্ষরভিত্তিক উপাত্ত নিয়ে কাজ করা যায়
* যেকোনো ধরনের হিসাবের জন্য সুবিধাজনক
• কলাম ও সারি থাকার কারণে উপাত্ত শ্রেণিকরণ সহজ
• সূত্র ব্যবহারের সুযোগ থাকায় অনেক বেশি উপাত্ত নিয়ে কাজ করা যায়
• বিভিন্ন ফাংশন সূত্রাকারে ব্যবহার করে সহজে উপাত্ত বিশ্লেষণ করা যায়
• আকর্ষণীয় গ্রাফ, চার্ট ব্যবহার করে উপাত্ত উপস্থাপন করা যায় ।

 

স্প্রেডশিট ব্যবহারের ক্ষেত্র :
স্প্রেডশিট হচ্ছে একধরনের অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার যা তালিকাবদ্ধভাবে ডাটা বিন্যাস, বিশ্লেষণ ও
সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়।
নিয়ে লোডশিটের কতিপর ব্যবহার উল্লেখ করা হল:
• শিক্ষাক্ষেত্রের ফলাফল বিশ্লেষণ,
• আয়-ব্যয় হিসাবে;
• বাজেট তৈরিতে,
• কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন সংক্রান্ত হিসাব 

• আয়কর হিসাব ও বিশ্লেষণে
• নির্বাচনের ভোট পামার;
• খেলোয়াড়ের প্রদর্শিত ক্রীড়াকৌশল মূল্যায়নে ।

Content added By
Content updated By

স্প্রেডশিট ব্যবহারের কৌশল

তোমরা ইতোমধ্যে প্রেডশিট ব্যবহারের কিছু মৌলিক ধারণা সম্পর্কে শিখেছ। এ বইয়ে তোমরা আরও কিছু অগ্রসর ধারণা শিখতে পারবে।
গুণ করা
প্রেডশিটে গুণ করার জন্য ফলাফল সেলের মধ্যে সুত্র দিতে হয়। সূত্র সব সময় " " সমান চিহ্ন দিয়ে শুরু
হয়।গু্ন করার প্রক্রিয়া দুধরনের।

১. সাধারণভাবে সেলে সূত্র লিখে এন্টার দিলে ফলাফল পওয়া যায় ।

২. ফলাফল সেলে শ্রেডশিট ফাংশন = PRODUCT লিখে সেনের রেঞ্জ দিয়ে এন্টার দিলে।

 

ভাগ করা
স্প্রেডশিটে ভাগ করার কাজটিও সূত্র দিয়ে করতে হয়। ভাগ করার ক্ষেত্রে A1 সেলকে B1 সেল দিয়ে ভাগ করার জন্য ফলাফল সেলে = A1 / B1 সূত্র লিখতে হয়। এক্ষেত্রে / চিহ্নটি ভাগ চিহ্ন হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

শতকরা নির্ণয় করা
৪০০ টাকার ১৫% কত টাকা? ক্রয়মূল্য ১২০০ টাকা হলে ১৬% লাভে বিক্রয়মূল্য কত? বাস্তব জীবনে আমরা এ ধরনের অনেক হিসাবের মুখোমুখি হই। স্প্রেডশিটের মাধ্যমে সহজেই আমরা এ হিসাবগুলো করতে পারি ।

 প্রেডশিটের মাধ্যমে প্রথম সমস্যাটি সমাধানের ক্ষেত্রে ফলাফল সেলে =A3*B3% সূত্র প্রয়োগ করে সমাধান করা যায়। সুত্রটি কীবোর্ড ব্যবহার করে ফলাফল সেলে লিখার নিয়ম হলো প্রথমে = চিহ্ন দিয়ে ৪০০ নিখা সেলে ক্লিক করতে হবে। তারপর কীবোর্ডে * চাপতে হবে। তারপর ১৫ লিখা সেলে ক্লিক করতে হবে । এরপর কীবোর্ড থেকে % (লিফট কী চেপে ৫) লিখে এন্টার করতে হবে। পেয়ে যাবে তোমাদের ফলাফল। দ্বিতীয় সমস্যাটি সমাধান করার জন্য =A3*B3%+A3 সুত্র ব্যবহার করতে হবে। এ সূত্রটি লিখার নিয়মও উপরের নিয়মের মতো।

Content added By
Content updated By
Promotion